শীতের রাত রাত নেমে এসেছে। বাইরে প্রচুর শীত। কম্বলের তলা থেকে মুখ বের করে হারিকেনের আলোয় পড়তে বসেছে অয়ন। সে ক্লাস থ্রী-এর ছাত্র। পড়াশুনায় খুব ভাল। ক্লাসে তার রোল নম্বর দুই। অয়নকে বাসার সবাই খুব আদর করে। আব্বু, আম্মু, দাদাভাই তিন জনেই সমান। তবে আম্মু তাকে মাঝে মাঝে খুব শাসন করে। সেদিন স্কুল থেকে বিজ্ঞান বইটা হরিয়ে বসায় ফেরার পর আম্মু তাকে খুব মেরেছে। এই নিয়ে অয়নের কোনো রাগ নেই। সে আম্মুকে ভালবাসে। অয়নকে মারলে দাদুভাই আম্মুকে বকাঝকা করে। তারপর অয়নকে কোলে তুলে নেয়। দাদুভাই বলে, ‘রাগ করিসনা দাদু। তোর আম্মুর নামে আজকেই তোর নানার কাছে নলিশ করব। তখন তোর আম্মু বুঝবে মজা। আর কদিসনা দাদু।’ আব্বু অয়নকে কখনো মারে না। তারপরেও অয়ন আব্বুকে ভয় পায়। আব্বু তাকে একবার ধমক দিয়েছিল। ভয়ের চোটে অয়ন প্যান্টে হিসু করে দিয়েছে। আব্বু প্রায়ই তার জন্য খেলনা কিনে আনে। আব্বুকে অয়ন ভালবাসে। আজ দাদু বাসায় নেই। সে বড় ফপুদের বাসায় বেড়াতে গেছে। অয়ন যেতে চেয়েছিল। আম্মু তাকে যেতে দেয়নি। দাদু মাঝে মাঝেই ফুপুদের বাসায় বেড়াতে যায়। দুই এক মাস বেড়িয়ে আবার চলে আসে। এই বয়সে তার ঘরে থাকতে ভাল লাগে না। এভাবে বেড়িয়ে সে বকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায়। অয়নদের ঘরে সামনে একট কাঠাঁল গাছ। গাছটতে কখনো কাঠাঁল হয় না। বাবা অনেক বার গাছটা কেটে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু দাদু তাকে গাছটা কাটতে দেয়নি। দাদুর নাকি গাছটার প্রতি মায়া হয়ে গেছে। সেই গাছে প্রতিদিন একটা শালিক পাখি এসে বসে। অয়ন প্রতিদিন পাখিটাকে দেখে। পখিটা বসে বসে ঝিমায়। অয়নের দিকে চেয়ে থাকে। পাখিটার জন্য অয়নের খুব মায়া হয়। সব পখিদের অনেক বন্ধু থাকে। কাঠাঁল গাছে বসে থাকা এই শালিক পখিটার কি কোনো বন্ধু নেই? আজ অয়ন পাখিটকে দেখতে পায়নি। অনেক বার সে গাছটার সামনে গিয়েছে। চেয়ে চেয়ে বরবার দেখেছে। পখিটা কোথাও নেই। পাখিটা কি হারানো বন্ধুকে খুজে পেয়েছে? নকি নতুন কোনো বন্ধু জুটিয়েছে? পড়াশুনা শেষ করে অয়ন শুয়ে পড়ল। বাব এখনো ফেরেনি। মা বলল, ‘বলল ভাত খাবি না?’ ‘না।’ ‘শরীর খারাপ করবে যে।’ ‘খেতে ইচ্ছে করছে না।’ ‘মন খারপ?’ ‘হুম।’ ‘আমি খাইয়ে দিলে খাবে?’ ‘হ্যা, খাব।’ মা হাসল। অয়ন মায়ের হাসি দেখল। এই হসি দেখলে কারো মন খারপ থাকে না। অয়নের মন ভাল হয়ে গেল। বাইরে জোৎস্না। আকাশে চাঁদ। মায়ের মুখে হাসি। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি কিছু আছে? মা বলল, ‘দুধভাত খাবে, নাকি মাছভাত?’ ‘মাছভাত খাব।’ ‘বসো, আমি ভাত নিয়ে আসি।’ বাবা এসেছে। অয়নের পশে বসে বলল, ‘পড়াশুনা শেষ?’ ‘হুম।’ ‘তোমার জন্য একটা খেলনা এনেছি।’ বাবা খেলনাটা বের করল। বাবা বলল, ‘এটা একটা কথা বলার খেলনা বিড়াল।’ ‘বিড়ালটা কথা বলে?’ ‘হ্যা কথা বলে। কিন্তু তার আগে সুইচ অন করতে হয়।’ ‘আমি এখন বিড়ালটার সাথে কথা বলব?’ ‘হ্যা, বলো’ বাবা সুইচ অন করে দিল। সাথে সাথে খেলনা বিড়ালটার চোখ দুটি জ্বলে ওঠল। ভাত মেখে মা এসে দড়িয়েছে। বাবর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি এনেছ এটা?’ ‘খেলনা বিড়াল।’ ‘এসব এনে এনে তুমি ছেলেটার মাথা খাচ্ছ।’ অয়ন বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে বলল, ‘এই তোমার নাম কি?’ বিড়ালটা সাথে সাথে জবাব দিল, ‘এই তোমার নাম কি?’ অয়ন মজা পেয়ে হেসে ওঠলো। সাথে সাথে বিড়ালটাও হেসে ওঠলো। অয়ন বাব-মায়ের দিকে তাকাল। বাবা-মা দুজনেই হাসছে। বাবা-মায়ের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে একটি হাস্যমুখী বালক। এটা পৃথীবির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের একটি। অয়ন সব সময় বাবা-মায়ের মাঝখানে ঘুমায়। আজ তাদের সাথে ঘুমাল একট খেলনা বিড়াল। বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। অয়ন বাবা-মায়ের কথা ভাবছে। সে বাব-মা দুজনকে সে প্রচন্ড ভালবাসে। মনে হয়, এদেরকে ছড়া সে কখনো থাকতে পারবে না। বড় হয়ে প্রিয়ার হাতে হাত রেখে অয়ন যখন গান গাইবে, তখন কি তার বাবা-মায়ের কথা মনে থাকবে? তখন তার সমস্ত হৃদয় জুড়ে থাকবে প্রিয়ার ছবি। সেখানে বাবা-মায়ের কোনো স্থান নেই। বাব-মা দুজনেই সন্তানকে ভালবসে। সন্তা্ন কোনো এক সময় এসে বাবা-মায়ের কথা ভুলে যায়। কিন্তু বাবা-মা কখনোই ভুলে যায় না। অয়ন এখন যেমন বলছে, তখনও কি বলবে- মাগো তোমায় ভালবাসি, বাবা তোমায় ভালবাসি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।